২০২০ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ৭২৯ জন শ্রমিক নিহত এবং ৪৩৩ জন শ্রমিক আহত হয়েছে। নির্যাতনের শিকার হন ৫৯৬ জন শ্রমিক, যার মধ্যে কর্মক্ষেত্রে ২৩২ জন এবং কর্মক্ষেত্রের বাইরে ৩৬৪ জন নির্যাতিত হন। বিভিন্ন সেক্টরে মোট ৫৯৩টি শ্রমিক আন্দোলনের ঘটনা ঘটে, যার মধ্যে ২৬৪টি শ্রমিক আন্দোলনের ঘটনা ঘটে তৈরি পোশাক খাতে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিল্স এর উদ্যোগে ‘বাংলাদেশের শ্রম ও কর্মক্ষেত্র পরিস্থিতি বিষয়ে সংবাদপত্রভিত্তিক বিল্স জরিপ-২০২০’ শীর্ষক পর্যালোচনা সভায় গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ হলে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
বিল্স ভাইস চেয়ারম্যান শিরীন আখতারের সভাপতিত্বে এবং বিল্স নির্বাহী পরিষদ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদের সঞ্চালনায় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিলস্ ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসাইন এবং আমিরুল হক আমিন, বিল্স উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য নইমুল আহসান জুয়েল, নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাকিল আখতার চৌধুরী, ডিইউজে সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ, বাংলাদেশ লেবার রাইটস জার্নালিস্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান, বিলস্ পরিচালক কোহিনূর মাহমুদ এবং নাজমা ইয়াসমীন। জরিপের প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিল্স উপপরিচালক মো. ইউসুফ আল মামুন।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনায় ৭২৯ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়, এরমধ্যে ৭২৩ জন পুরুষ এবং ৬ জন নারী শ্রমিক। খাত অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি ৩৪৮ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয় পরিবহন খাতে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮৪ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয় নির্মাণ খাতে। তৃতীয় সর্বোচ্চ ৬৭ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয় কৃষি খাতে। এছাড়া দিনমজুর ৪৯ জন, বিদ্যুৎ খাতে ৩৫ জন, মৎস্য শ্রমিক ২৭ জন, স্টিল মিল শ্রমিক ১৫ জন, নৌপরিবহন শ্রমিক ১৫ জন, মেকানিক ১৪, অভিবাসী শ্রমিক ১৫ এবং অন্যান্য খাতগুলোতে যেমন ইটভাটা, হকার, চাতাল, জাহাজ ভাঙাসহ ইত্যাদি সেক্টরে ৬০ জন শ্রমিক নিহত হন। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় বিভিন্ন খাতে ১২০০ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়, এরমধ্যে ১১৯৩ জন পুরুষ এবং ৭ জন নারী শ্রমিক। খাত অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি নিহতের ঘটনা ঘটে পরিবহন খাতে ৫১৬ জন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শ্রমিক নিহতের ঘটনা ঘটে নির্মাণ খাতে ১৩৪ জন। তৃতীয় সর্বোচ্চ শ্রমিক নিহতের ঘটনা ঘটে কৃষি খাতে ১১৬ জন।
জরিপে আরও দেখা যায়, ২০২০ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ৪৩৩ জন শ্রমিক আহত হয়, এরমধ্যে ৩৮৭ জন পুরুষ এবং ৪৬ জন নারী শ্রমিক। মৎস্য খাতে সর্বোচ্চ ৬৮ জন শ্রমিক আহত হন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নির্মাণ খাতে ৪৯ জন শ্রমিক আহত হন। এছাড়া বিদ্যুৎ খাতে ৪৮, পরিবহন খাতে ৪৭, জুতা কারখানায় ২০ জন, নৌপরিবহন খাতে ১৬, তৈরি পোশাক শিল্পে ৩৭, জাহাজ ভাঙা শিল্পে ২৯, দিনমজুর ১৬, উৎপাদন শিল্পে ১৯, স্টিল মিলে ১৯, কৃষিতে ১০ জন শ্রমিক আহত হন। এছাড়া অন্যান্য খাতে ৪০ জন শ্রমিক আহত হন। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় বিভিন্ন সেক্টরে ৬৯৫ জন শ্রমিক আহত হন, এদের মধ্যে ৬৭৮ জন পুরুষ এবং ১৭ জন নারী শ্রমিক। মৎস্য খাতে সর্বোচ্চ ১৩২ জন শ্রমিক আহতের ঘটনা ঘটে, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শ্রমিক আহতের ঘটনা ঘটে নির্মাণ সেক্টরে ১১৭ জন। তৃতীয় সর্বোচ্চ শ্রমিক আহতের ঘটনা পরিবহন খাতে ১০৪ জন।
সংবাদপত্র জরিপ অনুযায়ী, ২০২০ সালে ৫৯৬ জন শ্রমিক নির্যাতনের শিকার হন। এরমধ্যে ৩১৬ জন নিহত, ২২৯ জন আহত, ৮ জন নিখোঁজ, ২৪ জনের ক্ষেত্রে আত্মহত্যা, অপহৃত ১৪ জনকে উদ্ধার এবং ৫ জনের ক্ষেত্রে নির্যাতনের ধরন উল্লেখ করা হয়নি। এদের মধ্যে ৪৫৪ জন পুরুষ এবং ১৪২ জন নারী শ্রমিক। এদের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে ২৩২ জন, কর্মক্ষেত্রের বাহিরে ৩৬৪ জন শ্রমিক নির্যাতনের শিকার হন। সবচেয়ে বেশি ১০৯ জন শ্রমিক হতাহত হন পরিবহন সেক্টরে, যার মধ্যে ৯০ জন নিহত, ১৩ জন আহত, ৪ জন শ্রমিক আত্মহত্যা করেন এবং অপহৃত দুজন শ্রমিককে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭৮ জন শ্রমিক হতাহত হন তৈরি পোশাক শিল্পে। যার মধ্যে কর্মক্ষেত্রে ৩ জন (১ জন নিহত ও ২ জন আহত) এবং কর্মক্ষেত্রের বাইরে বাকি ৭৫ জন নির্যাতিত হন। এরমধ্যে ২৫ জন নিহত, ৪৮ জন আহত, ১ জন নিখোঁজ, ৩ জন শ্রমিক আত্মহত্যা করেন এবং ১ জনের ক্ষেত্রে নির্যাতনের ধরণ উল্লেখ করা হয়নি।
এছাড়া অভিবাসী খাতে ৬৫ জন শ্রমিক হতাহত হন, এরমধ্যে ৫২ জন নিহত, ১১ জন আহত, ১ জন নিখোঁজ এবং ১ জনের ক্ষেত্রে নির্যাতনের ধরন উল্লেখ করা হয়নি। নির্মাণ খাতে ৬৩ জন শ্রমিক হতাহত হন, এরমধ্যে ৮ জন নিহত, ৫২ জন আহত এবং ৩ জন শ্রমিক আত্মহত্যা করেন। কৃষি খাতে ৫৮ জন শ্রমিক হতাহত হন, এরমধ্যে ৪২ জন নিহত, ১১ জন আহত, ১ জন নিখোঁজ, ৩ জন আত্মহত্যা এবং ১ জন অপহৃত শ্রমিককে উদ্ধার করা হয়। গৃহশ্রমিক খাতে ৪৪ জন শ্রমিক হতাহত হন, এরমধ্যে ১৬ জন নিহত, ২৩ জন আহত, ৪ জন আত্মহত্যা করে এবং ১ জনের ক্ষেত্রে নির্যাতনের ধরন উল্লেখ করা হয়নি।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে নির্যাতনে ১২৯২ জন শ্রমিক হতাহত হন। এরমধ্যে খুন বা হত্যার শিকার হয় ৩৩২ জন শ্রমিক, আহত হয় ৮১০ জন শ্রমিক, ৬৭ জন নিখোঁজ, ২৬ জন আত্মহত্যা এবং ৫৭ জনের ক্ষেত্রে নির্যাতনের ধরন উল্লেখ করা হয়নি। ২০১৮ সালে নির্যাতনে ৭৬৪ জন শ্রমিক হতাহতের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ২৭৯ শ্রমিক খুন বা হত্যার শিকার হন, নির্যাতনে আহত হয় ২৬৩ জন শ্রমিক, ১৭০ জন শ্রমিক নিখোঁজ হন এবং ৩১ জন শ্রমিক আত্মহত্যা করেন। ২০২০ সালে বিভিন্ন সেক্টরে সবমিলিয়ে ৫৯৩টি শ্রমিক আন্দোলনের ঘটনা ঘটে। সবচেয়ে বেশি ২৬৪টি শ্রমিক আন্দোলনের ঘটনা ঘটে তৈরি পোশাক খাতে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৯টি শ্রমিক আন্দোলনের ঘটনা ঘটে পাট শিল্পে। এছাড়া চিনি শিল্পে ৪৬টি, পরিবহন খাতে ৪৫টি, কৃষি খাতে ২৩টি, নৌপরিবহন খাতে ১৯টি, গণমাধ্যমে ১৮টি, অভিবাসী শ্রমিক ১৮টি, সরকারি কর্মচারী ১৫টি, স্বাস্থ্য খাতে ১৫টি, বিড়ি শিল্পে ১৩টি এবং অন্যান্য সেক্টরে ৬৮টি শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটে। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে বিভিন্ন সেক্টরে সবমিলিয়ে ৪৩৪টি শ্রমিক আন্দোলনের ঘটনা ঘটে। সবচেয়ে বেশি ১৩৪টি শ্রমিক আন্দোলনের ঘটনা ঘটে তৈরি পোশাক খাতে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬৮টি শ্রমিক আন্দোলনের ঘটনা ঘটে পাট শিল্পে। এছাড়া পরিবহন খাতে ঘটে ৬১টি, গণমাধ্যমে ২৬টি, কৃষিতে ১৮টি, হকার ১৭টি, নৌপরিবহন খাতে ১৫টি, শিক্ষা খাতে ১১টি, চা শিল্প এবং সিটি করপোরেশনে ৯টি এবং অন্যান্য সেক্টরে ৬৬টি শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটে। আন্দোলন করতে গিয়ে এ সময় একজন ৯৯ জন শ্রমিক আহত হন। আহতদের মধ্যে ৬৪ জন পুরুষ এবং ৩৫ জন নারী শ্রমিক। সবচেয়ে বেশি তৈরি পোশাক শিল্পে ৫৪ জন শ্রমিক আহত হন। এছাড়া স্পিনিং মিলে ৩১ জন, পাট শিল্পে ১২ এবং চা শিল্পে ২ জন শ্রমিক আহত হন।
জরিপ অনুযায়ী সর্বোচ্চ ১৭৬টি শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটে বকেয়া বেতনের দাবিতে। এছাড়া দাবি আদায়ে ১৩৮টি, অধিকার আদায়ে ১১৫টি, বন্ধ কারখানা খুলে দেয়ার দাবিতে ৪৫টি, বোনাসের দাবিতে ৩৪টি, লে-অফের কারণে ৩০টি, ভাতার দাবিতে ২৯টি এবং অন্যান্য দাবিতে ২৬টি শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটে। সংবাদ সূত্র : দৈনিক সংবাদ
আপনার মতামত জানানঃ