যে-ই সুযোগ পাচ্ছে সে-ই সাংবাদিকদের উপর নির্যাতন করছে৷ সেটা যে শুধু সরকারি দলের লোক তা নয়, ব্যবসায়ীরা করছে, অর্থশালীরা করছে৷ আসলে সাংবাদিকদের খবরটি যাদের বিরুদ্ধে যাচ্ছে, তারাই এটা করছে৷
সংবাদ সংগ্রহের সময় সাংবাদিকদের ওপর ধারাবাহিক হামলা গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের অপপ্রয়াস বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এসব হামলায় অবিলম্বে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি সাংবাদিকদের সুরক্ষায় বিশেষ আইনের দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।
বুধবার (১০ আগস্ট) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, সম্প্রতি ধারাবাহিকভাবে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং ক্ষমতার অপব্যবহার, হামলা-মামলা ও বিচারহীনতার মাধ্যমে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের চলমান প্রক্রিয়ার শঙ্কাজনক অপপ্রয়াসের অব্যাহত প্রবণতা। এসব ঘটনায় তাৎক্ষণিক কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হলেও বাস্তবিক অর্থে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিচার শেষ হয় না। যা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকের সুরক্ষা নিশ্চিতে সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয় অঙ্গীকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তো বটেই, রাষ্ট্রীয় কোনো কর্তৃপক্ষকেই তারা পরোয়া করে না। এই বেপরোয়া আচরণ প্রমাণ করে, কোনো না কোনো প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় তারা সুরক্ষা ও দায়মুক্তি পেয়ে থাকে।’
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যখন দেশের মানুষ প্রভাবশালী ও ক্ষমতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিবাজদের অর্থপাচার এবং নানা দুর্নীতির দায়ে বহুমুখী সংকট মোকাবিলা করছে, তখন দুর্নীতির তথ্য উদঘাটন ও প্রকাশের জন্য সাংবাদিকদের ওপর ধারাবাহিক হামলা কোনোভাবেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বিশেষ করে, সম্প্রতি চিকিৎসাখাতসহ বিভিন্ন জনসেবা প্রদানকারী ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি ও অনিয়মের তথ্য সংগ্রহকালে বেশ কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল ও পত্রিকার সাংবাদিকদের ওপর নৃশংস হামলার ঘটনায় স্পষ্ট যে, দুর্নীতিবাজরা কতটা বেপরোয়া, ক্ষমতাধর এবং সংঘবদ্ধ।
‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তো বটেই, রাষ্ট্রীয় কোনো কর্তৃপক্ষকেই তারা পরোয়া করে না। এই বেপরোয়া আচরণ প্রমাণ করে, কোনো না কোনো প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় তারা সুরক্ষা ও দায়মুক্তি পেয়ে থাকে।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, এ বছরের শুরু থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত অন্তত ১১৯ জন সাংবাদিক নানামুখী হামলা, মামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। যাদের মধ্যে ৩৮ জন পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে হামলার ও ১৯ জন প্রকাশিত সংবাদের দায়ে মামলার শিকার হয়েছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, সম্প্রতি স্বাস্থ্যখাতে দীর্ঘদিন ধরে বিরাজমান অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য সংগ্রহকালে ঢাকা ও বরিশালে অন্তত তিনজন টেলিভিশন সাংবাদিকের ওপর সংঘবদ্ধ ভয়াবহ হামলা এ খাতে শক্তিশালী সিন্ডিকেট এবং তাদের সুরক্ষা দাতাদের বেপরোয়া দৌরাত্মের প্রমাণ দেয়, যা টিআইবির বিভিন্ন গবেষণা এবং গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে। আমরা মনে করি, এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি মুক্ত সাংবাদিকতার সাংবিধানিক অঙ্গীকারকে ধারাবাহিকভাবে পদদলিত করছে।
তথ্য প্রকাশ ও বাকস্বাধীনতা নিশ্চিতের স্বার্থে মুক্ত সাংবাদিকতার পথ উন্মুক্ত করতে সাংবাদিকদের ওপর সংঘটিত প্রতিটি নির্যাতন, হয়রানি ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তি প্রদানের পাশাপাশি সাংবাদিকদের সুরক্ষায় বিশেষ আইন প্রণয়নের দাবি জানান ইফতেখারুজ্জামান।
ধারাবাহিক হামলা সাংবাদিকদের মনোবল ভেঙে দিয়ে দুর্নীতির তথ্য প্রকাশে বাধা সৃষ্টির সুগভীর ও সংঘবদ্ধ অপকৌশল কিনা? এমন প্রশ্ন তুলে নির্বাহী পরিচালক বলেন, বিশ্ব দায়মুক্তি সূচক-২০২১ অনুযায়ী সাংবাদিকদের নিরাপত্তাহীনতায় বাংলাদেশের দশম অবস্থান লজ্জাজনকভাবে দেশে সাংবাদিকতার প্রকট ঝুঁকির দৃষ্টান্ত। বিশ্বমুক্ত গণমাধ্যম সূচক ২০২২ অনুযায়ী ১০ ধাপ পিছিয়ে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের ১৬২তম অবস্থানও প্রমাণ করে যে, সাংবাদিকতা এদেশে ধারাবাহিকভাবেই কঠিন হয়ে উঠছে। তাই সাংবাদিকদের সুরক্ষায় অবিলম্বে বিশেষ আইন প্রণয়ন এবং তার কার্যকর প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩৩০
আপনার মতামত জানানঃ