ফ্রিডম হাউস রিপোর্টে স্বাধীনতার সূচকে সবচেয়ে বেশি উন্নতি করা দেশগুলোর তালিকায় স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ। সংস্থাটির বাৎসরিক রিপোর্ট বলছে, গত বছর কর্তৃত্ববাদী শাসকেরা দুনিয়ার দেশে দেশে তাদের হাতকে আরও শক্ত করেছেন। তাতে বিশ্ব জুড়ে মানুষের স্বাধীনতা চর্চার অধিকার আরও কমেছে। এর মধ্যেও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো কয়েকটি ক্ষেত্রে আশার আলো দেখিয়েছে।
রিপোর্ট মতে, ২০২৪ সালে স্বাধীনতার সূচকে সবচেয়ে বেশি উন্নতি হওয়া চার দেশের মধ্যে তিনটিই দক্ষিণ এশিয়ার। দেশগুলো হলো- বাংলাদেশ, ভুটান এবং শ্রীলঙ্কা। তবে স্বাধীনতার সূচক মানে সবচেয়ে বেশি উন্নতি হওয়া দেশগুলোর তালিকায় নাম থাকলেও বাংলাদেশ এখনো রাজনৈতিক অধিকারচর্চা ও নাগরিক স্বাধীনতার চর্চায় ‘আংশিক স্বাধীন’ দেশ। ২০২৩ সালে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৪০। ২০২৪ সালে উন্নতি হলেও শ্রেণি পরিবর্তন হয়নি, বাংলাদেশের এবার স্কোর ৪৫।
ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ফ্রিডম হাউসের বার্ষিক ওই রিপোর্টটি বুধবার প্রকাশ পায়। রিপোর্ট মতে, ২০২৪ সালে স্বাধীনতার সূচকে দু’টি দেশ নতুন করে ‘স্বাধীন’ দেশের শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। দেশ দু’টি হলো সেনেগাল ও ভুটান। দেশ দু’টির উত্তরণের কারণ ব্যাখ্যায় এএফপি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, সেনেগালে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ভোট পিছিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা করেছিলেন।
কিন্তু বিরোধীদের আন্দোলনের মুখে সেই অপচেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং ভোটে বিরোধীরা জয়ী হন। আর হিমালয় অঞ্চলের ছোট্ট দেশ ভুটান প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথকে সুসংহত করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র ভুটানই ‘স্বাধীন’ দেশের শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা প্রসঙ্গে ফ্রিডম হাউস রিপোর্টে বলা হয়, শ্রেণিতে অবস্থান পরিবর্তন না হলেও ২০২৪ সালের বার্ষিক রিপোর্টের এ দুই দেশের বড় ধরনের উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে।
বাংলাদেশে গত বছর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি প্রায় ১৫ বছর বাংলাদেশের ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে ছিলেন। বাংলাদেশ ছাড়াও গত বছরের ডিসেম্বরে সিরিয়ার দীর্ঘদিনের শাসক বাশার আল-আসাদের পতন হয়। ইসলামপন্থি যোদ্ধারা তাকে উৎখাত করেন।
তিনিও দেশে ছেড়ে পালিয়ে রাশিয়ায় আশ্রয় নেন। ফ্রিডম হাউসের রিপোর্টে বাংলাদেশ ও সিরিয়া প্রসঙ্গে বলা হয়, যদিও উভয় দেশেই সরকার পতনের পর দ্রুত নাগরিক স্বাধীনতার মান উন্নত হয়েছে। তবে রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বে এ উন্নয়ন দেখতে আরও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। অন্যদিকে, শ্রীলঙ্কায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসেন প্রেসিডেন্ট অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে।
অনূঢ়ার জয়ের মধ্যদিয়ে দেশটিতে দীর্ঘদিন ধরে চলা দুই দলের আধিপত্যে ভাঙন ধরেছে। এএফপি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশ ও অঞ্চল মিলিয়ে তালিকায় সবচেয়ে বেশি উন্নতি হয়েছে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে। ৩৮ স্কোর নিয়ে কাশ্মীর এখন ‘আংশিক স্বাধীন’। ২০১৯ সালে ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকার মুসলিম অধ্যুষিত ওই অঞ্চলটির বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার পর গত বছর সেখানে প্রথমবার বিধানসভা নির্বাচন হয়েছে।
তবে ফ্রিডম হাউসের তালিকায় দেশ হিসেবে ভারতের অবনতি হয়েছে। এ জন্য ভারতের বিচার বিভাগে নিয়োগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রভাব বিস্তারের চেষ্টার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। গবেষণা সংস্থাটি ভারতকে ‘আংশিক স্বাধীন’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে, স্কোর ৬৩। গত বছর ভারতের স্কোর ছিল ৬৬। ২০২১ সালে ভারত ‘স্বাধীন’ শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল।
২০২৪ সালে স্বাধীনতা সূচকে সবচেয়ে বেশি অবনমন হওয়া চার দেশ হচ্ছে-এল সালভাদর, হাইতি, কুয়েত ও তিউনিশিয়া। এর মধ্যে এল সালভাদর (স্কোর ৪৭) ও তিউনিশিয়া (স্কোর ৪৪) ‘আংশিক স্বাধীন’। আর হাইতি (২৪) ও কুয়েত (স্কোর ৩১) ‘স্বাধীন নয়’। রিপোর্টের সহ-লেখক ইয়ানা গোরোখোভস্কায়া বলেন, টানা ১৯ বছর ধরে বিশ্ব জুড়ে স্বাধীনতার মানের অবনমন হচ্ছে। তবে ২০২৪ সাল বিশেষভাবে অস্থিতিশীল ছিল।
কারণ, গত বছর বেশ কয়েকটি দেশে নির্বাচন হয়েছিল। ইয়ানা বলেন, সবচেয়ে বড় কথা হলো, আগের বছরগুলোর মতো এবারো বিশ্ব জুড়ে স্বাধীনতা কমেছে। কিন্তু এতসব নির্বাচনের কারণে আগের বছরগুলোর তুলনায় ২০২৪ সাল বেশি নাটকীয় বছর ছিল। ইয়ানা বলেন, বাংলাদেশ ও সিরিয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে নাগরিক স্বাধীনতায় উন্নতি হয়েছে।
তবে রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব অর্জনের জন্য তাদের আরও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। ইয়ানা মনে করেন, রাজনৈতিক অধিকার অনেকটা প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে। এগুলো ভেঙে ফেলা খুব সহজ, কিন্তু গড়ে তোলা খুবই কঠিন। ২০৮টি দেশ ও অঞ্চলের মানুষের রাজনৈতিক অধিকার ও নাগরিক স্বাধীনতা চর্চার সুযোগ কতোটা আছে, তার ওপর ভিত্তি করে ফ্রিডম হাউস বছরান্তে ওই রিপোর্ট প্রস্তুত করে।
আপনার মতামত জানানঃ