আওয়ামী সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন প্রকল্পে বেরিয়ে আসছে হরিলুটের ঘটনা। এবার সামনে এলো দেশের আলোচিত দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন ও ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের নজিরবিহীন দুর্নীতির খবর। এই দুই প্রতিষ্ঠান রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে গত ১৬ বছরে রেলের বিভিন্ন প্রকল্পের অন্তত ৩০ হাজার কোটি টাকার কাজ করেছে।
জানা যায়, আওয়ামী সরকারের আমলে উন্নয়ন বাজেটে সবচেয়ে বেশি পরিবহন ও যোগাযোগ অবকাঠামো খাত বরাদ্দ পেত।
এর মধ্যে স্থানীয় ঠিকাদারদের মধ্যে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে সবচেয়ে বেশি টাকার কাজ করেছে ম্যাক্স ও তমা গ্রুপ। মূলত আওয়ামী সরকারের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় এই দুই প্রতিষ্ঠান রেলের সব মেগাপ্রজেক্টগুলোর কাজ করেছে। রেল ভবনের উচ্চপদে নিজস্ব কর্মকর্তা বসিয়ে তমা ও ম্যাক্স গ্রুপ মিলে গড়ে তোলে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। তাদের দিয়েই মূলত রেলের সব মেগাপ্রকল্পের কাজ নিয়েছে এ সিন্ডিকেট।
জানা গেছে, রাজবাড়ী-টুঙ্গিপাড়া রেলপথ প্রকল্প, পাবনা ঈশ্বরদী-ঢালারচর রেলপথ, চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন রেলপথ নির্মাণ, আখাউড়া-লাকসাম রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্পের মেয়াদ ও খরচ দফায় দফায় বাড়িয়ে তমা ও ম্যাক্স গ্রুপ লোপাট করেছে হাজার হাজার কোটি টাকা।
প্রকল্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন রেলপথ নির্মাণ। এই প্রকল্পেই বেশি লোপাটের চিত্র পাওয়া গেছে। এই রুটের ১০১ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে ২০১৬ সালে ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা।
সেই প্রকল্প ১৮ হাজার কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। কিন্তু এখনো প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ হয়নি।
প্রতিষ্ঠান দুটির বিরুদ্ধে ভয়াবহ এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে প্রথম অনুসন্ধানে নামে দুদক। তখনকার অনুসন্ধান টিম তমা-ম্যাক্স সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ডুয়েল রেলপথ নির্মাণকাজের টেন্ডার ছিনতাই ও চীনা কোম্পানি চায়না লিমিটেডের কর্মকর্তাদের অপহরণের তথ্য-প্রমাণও পায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অদৃশ্য শক্তির ছোঁয়ায় তখন অনুসন্ধান আটকে যায়।
মামলা তো দূরের কথা অনুসন্ধানটি নিষ্পত্তিও করা হয়নি। এরপর গত বছরের ১৫ জানুয়ারি এই দুই গ্রুপের বিরুদ্ধে ফের অনুসন্ধানে নামে দুদক। গঠন করা হয় তিন সদস্যের কমিটি। এই কমিটিও তমা ও ম্যাক্স গ্রুপের পরিচালকদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ভুয়া এলসি খুলে বিদেশে টাকা পাচারসহ বিভিন্ন অনিয়মের সন্ধান পায়। কিন্তু সেটিও আলোর মুখ দেখেনি। মূলত দুদকের ভেতরে-বাইরে প্রভাবশালী মহলের তদবিরে অনুসন্ধান প্রতিবেদন এখনো আলোর মুখ দেখেনি।
ভয়াবহ এসব অভিযোগের বিষয়ে তমা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা না গেলেও ম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তার প্রতিষ্ঠান সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে প্রতিটা প্রকল্পের কাজ করছে। আমরা কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি করিনি। আমার সঙ্গে তমা গ্রুপের কোনো সম্পর্ক নেই।’
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম সামছুল হক বলেন, রেলের দুর্নীতিবাজ সব ঠিকাদার ও তাদের দুর্নীতির ভাগিদার মন্ত্রী, সচিব ও রেল কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এখনই সময়।
আপনার মতামত জানানঃ