ইসরায়েলের জরুরী বিভাগ বলছে ফিলিস্তিনিদের দিক থেকে আকস্মিক এবং নজিরবিহীন হামলায় অন্তত ২২ জন ইসরায়েলি নিহত হয়েছে। এছাড়া কমপক্ষে ৫৪৫ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
এমন অবস্থায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন তার দেশ ‘যুদ্ধের মধ্যে রয়েছে’। ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের দিক থেকে আকস্মিক আক্রমণ শুরুর পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী এক বক্তব্য দিয়েছেন।
ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের বেশ কিছু অস্ত্রধারী দক্ষিণ ইসরায়েলে ঢুকে পড়েছে। ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলে হাজার হাজার রকেট নিক্ষেপের পর এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। “আমরা যুদ্ধের মধ্যে আছি, এটা কোন অভিযান নয়, কোন উত্তেজনা নয়, এটা যুদ্ধ,” বলেন নেতানিয়াহু।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনি প্রায় ২৫০০ রকেট ছুঁড়েছে ইসরায়েলে। এছাড়া সমুদ্র, স্থলপথ এবং প্যারাগ্লাইড করে অস্ত্রধারীরা ইসরায়েলে ঢুকে পড়েছে।
রকেট হামলার জবাবে ইসরায়েল হামাসের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলের দাবি তারা হামাসের ১৭টি সেনা কম্পাউন্ডে হামলা করেছে। ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স আইডিএফ তাদের নিজস্ব সামাজিক মাধ্যম এক্সে জানিয়েছে তারা এখন পর্যন্ত ১৭টি সেনা কম্পাউন্ড আর হামাসের অপারেশনের চারটি হেডকোয়ার্টারে হামলা করেছে তারা।
হামাস নেতা মোহাম্মদ দেইফ বলেছেন, ‘আমরা বলতে চাই, যথেষ্ট হয়েছে।’ অন্যদিকে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, দখলদার সৈন্য এবং সেটলাররা যে আতঙ্ক তৈরি করেছে সেখান থেকে ফিলিস্তিনের জনগণের অধিকার রয়েছে নিজেদের রক্ষা করার।
রকেট হামলার পর ইসরায়েল হাজার হাজার সংরক্ষিত সেনাদের তলব করেছে। ইসরায়েলের গণমাধ্যম বলছেন, দক্ষিণ ইসরায়েলের বিভিন্ন জায়গায় ফিলিস্তিনী বন্দুকধারীদের লড়াই হচ্ছে। হামাস দাবি করেছে তারা অন্তত ৩৫ জন ইসরায়েলিকে বন্দি করেছে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে ইসরায়েলের সামরিক মুখপাত্র কোন মন্তব্য করেনি।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, তাদের উপর আক্রমণ করে হামাস ‘অনেক বড়’ ভুল করেছে। প্রতিটি জায়গায় ইসরায়েলি সৈন্যরা তাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এবং ইসরায়েল রাষ্ট্র এতে জয়ী হবে।
গাজা উপত্যকা থেকে এক আকস্মিক হামলা চালানোর পর, ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের কয়েক ডজন বন্দুকধারী দক্ষিণ ইসরায়েলের ঢুকে এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায় ফিলিস্তিনি অস্ত্রধারীরা ইসরায়েলের শহর সদেরতের রাস্তায় পথচারীকে লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করছে।
এছাড়া অনলাইনে আরেক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে সদেরতের রাস্তায় একদল সশস্ত্র ফিলিস্তিনি নিজেদের কালো পোশাকে ঢেকে পিক আপ ট্রাকে করে যাচ্ছে। এছাড়া তাদের ইসরায়েলি সৈন্যের সাথেও গুলি বিনিময় করতে দেখা যায়। গাজা থেকে এই শহরের দূরত্ব মাত্র এক মাইল।
ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স – আইডিএফ জানিয়েছে তারা এখন যুদ্ধাবস্থায় রয়েছে এবং কয়েক ডজন যুদ্ধ বিমান গাজায় হামাসের অবস্থান লক্ষ্য করে আকাশ পথে হামলা চালাতে যাচ্ছে।
ইহুদীদের বিশেষ ধর্মীয় অনুষ্ঠান সুকত শেষ হবার পরপরই শনিবার ভোর থেকে হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা অঞ্চল থেকে রকেট হামলা শুরু হয়। হামাস মিডিয়ার মাধ্যমে এক সিনিয়র সেনা কমান্ডার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এই অপারেশন শুরুর ঘোষণা দেন, তিনি প্রত্যেক ফিলিস্তিনিকে সবখানে থেকে যুদ্ধে নামার আহবান জানান।
ইসরায়েলের গোয়েন্দা ব্যর্থতা?
নিরাপত্তা বিষয়ক বিবিসি সংবাদদাতা ফ্রাঙ্ক গার্ডনার বলেছেন, এটা ইসরায়েলি গোয়েন্দা ব্যর্থতা। এরইমধ্যে গোয়েন্দা সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্তও শুরু করেছে ইসরায়েলি সরকার, যে কীভাবে হামাসের এত বড় পরিকল্পিত হামলা তাদের নজর এড়িয়ে গেল।
ইসরায়েলের গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বড় এবং দক্ষ। তারা দেশের ভেতরে এবং বাইরে কাজ করে। ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গ্রুপগুলোর ভেতরেই ইসরায়েলি গোয়েন্দারা রয়েছে। এছাড়া সশস্ত্র গ্রুপগুলোর সাথে মিশে আছে। এছাড়া লেবানন, সিরিয়া এবং অন্যান্য জায়গায়ও ইসরায়েলি গোয়েন্দারা সক্রিয়।
অতীতে বিভিন্ন সময় সুনির্দিষ্ট ড্রোন হামালা এবং মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং-এর মাধ্যমে ফিলিস্তিনী সশস্ত্র গোষ্ঠীর নেতাদের হত্যা করেছিল ইসরায়েল। এটা সম্ভব হয়েছিল গোয়েন্দা তথ্যের কারণে।
ইরানের সমর্থন এবং অন্য বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া
বিভিন্ন রিপোর্ট সূত্রে বিবিসি জানতে পেরেছে যে ইরান এই ফিলিস্তিনি হামলার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। ইরানের সংবাদ সংস্থা আইএসএনএ-র খবর দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আলী খামেনির উপদেষ্টা ইসরায়েলের উপর ফিলিস্তিনি হামলার পক্ষে কথা বলেছেন।
রহিম সাফাভি বলেছেন, “আমরা ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের অভিনন্দন জানাই, যতক্ষণ ফিলিস্তিন ও জেরুজালেমের স্বাধীনতা না আসে আমরা ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের পাশে থাকবো”, আইএসএনএ-এমনটি লিখেছে।
তবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ইসরায়েলের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেন, “আমি সকাল বেলা ইসরায়েলি নাগরিকদের উপর হামাস সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর হামলার খবরে মর্মাহত। ইসরায়েলের তাদের নিজেদের রক্ষা করার সবরকম অধিকার আছে।”
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ তীব্র ভাষায় এই হামলার সমালোচনা করে বলেছেন, “আমি ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের প্রতি আমার পূর্ণ সমবেদনা জানাই।”
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, “নিরীহ বেসামরিক লোকদের উপর সহিংসতা ও রকেট হামলা এখনি বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।”
তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে ইউরোপিয়ান কমিশনও। সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেয়েন এই হামলাকে ‘জঘন্য সন্ত্রাসী হামলা’ বলে বর্ণনা করেছেন।
রাশিয়ার ডেপুটি পররাষ্ট্র মন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া হল, “আমরা সবসময় সবার সংযত আচরণ আশা করি।” আর যুক্তরাষ্ট্র এই হামলার নিন্দা জানিয়ে দুই পক্ষকেই সহিংসতা বন্ধের আহবান জানিয়েছে।
আপনার মতামত জানানঃ