রহস্যজনক বা ‘আননোন’ কোনো নম্বর থেকে মুঠোফোনে ভিন্ন কোনো ভাষায় বার্তা এলে কেমন লাগবে আপনার? কী করবেন? আপনার মতোই দ্বিধায় পড়েছেন অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস, স্পেন ও যুক্তরাষ্ট্রের একদল গবেষক।
মহাকাশে দূরের কোনো উৎস থেকে অনেক বছর ধরে পাঠানো এক বেতার (রেডিও) সংকেত নিয়ে ব্যাখ্যাহীন অবস্থায় আছেন এসব গবেষক। প্রায় ৩৫ বছর ধরে এই বেতার সংকেতের অস্তিত্ব টের পেলেও কোনো ব্যাখ্যা নেই গবেষকদের কাছে।
২১ মিনিটের বেতার সংকেতকে গবেষকেরা ‘জিপিএম জে ১৮৩৯-১০’ নামকরণ করেছেন। সেই সংকেত নিয়েই ‘আ লং পিরিয়ড রেডিও ট্রানজিয়েন্ট অ্যাকটিভ ফর থ্রি ডিকেডস’ শিরোনামের নিবন্ধ বিশ্বখ্যাত সাময়িকী নেচারে প্রকাশ করেন একদল গবেষক।
৩৫ বছর ধরে এই অচেনা বেতার সংকেতের সন্ধান ছিল বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, পৃথিবীতে বসে আমরা ১৯৮৮ সাল থেকে একধরনের বেতার সংকেত গ্রহণ করছি। উৎস সম্পর্কে আমাদের বিন্দুমাত্রও জানা নেই।
১৯৮৮ সালে প্রথম এধরনের সংকেতের সন্ধান মেলে। যদিও এরপর দীর্ঘদিন তা নিয়ে কোনো তথ্য বিজ্ঞানীরা অনুসন্ধান করেননি। সম্প্রতি নতুন একটি সংকেত ধারণের পর পুরোনো বইপত্র ঘাঁটার সময় এই সংকেত যে ৩৫ বছর আগেও ধরা পড়েছিল, তা জানতে পারেন গবেষকেরা।
কোন বস্তু থেকে এই সংকেত আসছে, তা নিয়ে কোনো উত্তর নেই গবেষকদের কাছে। কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণা বা যন্ত্রের মাধ্যমে কোনো ব্যাখ্যাই যেন দাঁড় করাতে পারছেন না তাঁরা। পালসার থেকে যেমন শক্তি নির্গত হয় বা দ্রুত রেডিও সংকেতের মতো সংকেত বলে মনে করছেন তাঁরা।
মিলিসেকেন্ড থেকে কয়েক সেকেন্ড পর্যন্ত বিস্তৃত এই সংকেত। পালসার হচ্ছে এমন নিউট্রন তারকা, যারা দ্রুত ঘোরে আর বেতার সংকেত প্রেরণ করে। যখন সেই সংকেত পৃথিবীর আশপাশ দিয়ে যায়, তখন তা শনাক্ত হয়।
বিষয়টা অনেকটা কোনো দ্বীপের বাতিঘরের ঘূর্ণায়মান আলোক উৎসের মতো। এমনভাবে পালসার কাজ করে তখনই, যখন পালসারের চৌম্বকীয় শক্তি বেশি হয় আর তা দ্রুত ঘূর্ণায়মান হয়।
যদি চৌম্বকীয় শক্তি দুর্বল হয়, তাহলে আমরা পৃথিবী থেকে তার অস্তিত্ব টের পাব না। যে কারণে গবেষকেরা মনে করছেন, বেতার সংকেত যেখান থেকে আসছে, তা অনেক শক্তশালী।
অনেক সময় উচ্চ চৌম্বকীয় শ্বেতবামন গ্রহ বা ম্যাগনেটার দেখা যায়। এরা বিশেষ ধরনের নিউট্রন তারকা হয় আর এদের প্রচণ্ড শক্তিশালী চৌম্বকীয় বলয় থাকে। তবে তারা এমন ধরনের সংকেত প্রেরণ করবে না বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা।
কয়েক বছর ধরে গবেষকেরা গ্যালাটিক প্লেন নিয়ে গবেষণা করছিলেন। মারচিসন ওয়াইডফিল্ড অ্যারে বা এমডাব্লিউএ নামের পদ্ধতিতে তাঁরা গবেষণা করেন। এই গবেষণার সময় ৪৮ ঘণ্টা বিভিন্ন সংকেত পরীক্ষা করেন তাঁরা। এ সময়ই তাঁরা জিপিএম জে১৮৩৯-১০ শনাক্ত করেন।
অস্ট্রেলিয়ার টেলিস্কোপ কমপ্যাক্ট অ্যারে, পার্কস/মুরিইয়াং রেডিও টেলিস্কোপ, অস্ট্রেলিয়ান স্কয়ার কিলোমিটার অ্যারে পাথফাইন্ডার দিয়েও পর্যবেক্ষণ করেন গবেষকেরা। ১৯৮৮ সালে ভেরি লার্জ অ্যারে, ভিলাইট ও জিএমআরটি নামের পর্যবেক্ষণে এমন রেডিও সংকেতের তথ্য পাওয়া যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের জ্যোতির্গবেষক ভিক্টোরিয়া এম কাসপি জানান, এমনভাবে ভবিষ্যতে আরও অনেক আবিষ্কার আমাদের সামনে হাজির হবে।
তো, লেখার শুরুতে যা বলা হচ্ছিল, অচেনা বার্তা পেলে কী করবেন, কীভাবে তার অর্থ উদ্ধার করেন, তা জানা থাকলে গবেষকদের জানাতে পারেন আপনি। আপনার পথ ধরে বেতার সংকেতের অর্থও তাঁরা বের করে ফেলতে পারেন কিন্তু।
এসডব্লিউএসএস/১৮৫০
আপনার মতামত জানানঃ