বাংলাদেশ থেকে নকল তৈরি পোশাক পাঠানোর অভিযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর দায়ে শাস্তির খড়্গ নেমে আসতে পারে—এই আশঙ্কা তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকদের। এ নিয়ে এখন তারা উদ্বিগ্ন।
জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের জনপ্রিয় ব্রান্ডের নামে নকল করে পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এনিয়ে একটি পর্যালোচনাও শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে করে শীর্ষ আমদানিকারকটি বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির ওপর কোটা আরোপ, নিষেধাজ্ঞা কিংবা বাড়তি শুল্কারোপ করতে পারে।
বাংলাদেশে তৈরি পোশাক পণ্যের বিরুদ্ধে নকলের অভিযোগ ওঠায় ‘স্পেশাল ৩০১ রিভিউ অন আইপিআর প্রোটেকশন এন্ড এনফোর্সমেন্ট’ এর উদ্যোগ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাণিজ্য কর্তৃপক্ষ– ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ (ইউএসটিআর), যা বৈশ্বিক মেধাসত্ত্ব রক্ষা ও কার্যকরের দিকটি তত্ত্বাবধান করে। এই পত্রিকার প্রাপ্ত একটি নথিতে এমনটাই উল্লেখ আছে।
এবিষয়ে নিজেদের প্রদত্ত প্রাইমারি সাবমিশনে (প্রাথমিক যুক্তিখণ্ডন পত্র) বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রের পর্যালোচনার বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে বলেছে, প্রমাণ ছাড়া এ ধরণের অভিযোগ তোলা যৌক্তিক নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক বাণিজ্য কর্তৃপক্ষ ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেনটেটিভ (ইউএসটিআর) ১০ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের দূতাবাসের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দেশটিতে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের নামে নকল তৈরি পোশাক রপ্তানির অভিযোগ করেছে।
চিঠিতে ১৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে অভিযোগের জবাব দিতে বলা হয়েছে। তবে বাংলাদেশ চলতি মাসের ২০ তারিখের মধ্যে অভিযোগের জবাব দেবে বলে যুক্তরাষ্ট্রকে আশ্বস্ত করেছে। এ ঘটনায় রপ্তানিকারকদের পাশাপাশি অর্থনীতিবিদেরাও এখন উদ্বেগে।
জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নকল পণ্য সরবরাহের অভিযোগ করেছে আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশন (এএএফএ) এবং প্যারিসভিত্তিক ইউনিয়ন ডেস ফেব্রিকস (ইউনিফ্যাব)।
অভিযোগে এএএফএ বলেছে, তৈরি পোশাক সংগ্রহের জন্য বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ উৎস হওয়ার পরও মেধাস্বত্ব রক্ষায় প্রতিষ্ঠিত নীতিমালার অনুপস্থিতি এবং উচ্চ পর্যায়ে চরম দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশ থেকে অব্যাহত হারে নকল পণ্যের বৈশ্বিক বিস্তার ও উৎপাদন বাড়ছে।
রপ্তানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অভিযোগ প্রমাণিত হলে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির ওপর কোটা আরোপ, যে পণ্য নকল করা হয়েছে তার ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং বাড়তি শুল্কারোপ করতে পারে।
রপ্তানিকারকেরা জানান, নকল পণ্য সরবরাহ করার অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। একই সঙ্গে রপ্তানি আয়ে ধস নামবে। যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিযোগ যদি সত্যি প্রমাণ হয়, তাহলে বাংলাদেশ থেকে পোশাক কেনা অন্য দেশগুলোও ক্রয়াদেশ কমিয়ে দিতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অভিযোগটি আমাদের কাছে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের চিঠিতে সুনির্দিষ্ট করে কারা এই নকল পণ্য সরবরাহের সঙ্গে জড়িত এই রকম কিছু নেই।
চিঠিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের জনপ্রিয় ব্র্যান্ড নকল করে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানি করা হয়েছে। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য জানতে চেয়েছি, কারা এই নকল পণ্য সরবরাহের সঙ্গে জড়িত।’
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, নকল পণ্য সরবরাহের অভিযোগ বাংলাদেশকে গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখে দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি হুমকির মুখে পড়বে।
জানতে চাইলে বিজিএমইএর সহসভাপতি শহীদউল্লাহ আজিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের কোনো সদস্য এই নকল পণ্য সরবরাহের সঙ্গে জড়িত নয়। আমার মনে হয় যারা তৃতীয় পক্ষের হয়ে কাজ করে, তারা এ ধরনের পণ্য কারসাজির সঙ্গে জড়িত।’
এএএফএ জানিয়েছে, ২০২২ সালে বাংলাদেশে প্রস্তুত করা ৫৬টি নকল পণ্যের চালান জব্দ করা হয়েছে, ২০২১ সালের চেয়ে যা ৫০ শতাংশ বেশি। নকল পণ্য সরবরাহের অভিযোগ আছে চীন, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, কম্বোডিয়াসহ আরও বেশ কিছু দেশের বিরুদ্ধে।
এসডব্লিউএসএস/১৯২৫
আপনার মতামত জানানঃ