সম্প্রতি বেইজিং এর সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা গবেষণা দল পরীক্ষা নিরীক্ষা করে মত পোষণ করছে যে, সুন্দর হচ্ছে আমাদের মস্তিষ্কে তৈরি একটা রহস্যজনক এবং বিতর্কিত একটা ব্যাপার। আসলে কীভাবে বা কেন একটা কিছু আমাদের কাছে সুন্দর হয়ে ধরা দেয় তা নিয়ে তত্ত্বের অভাব নেই। তবে সবগুলোই অনেক পুরোনো। মনস্তত্ত্ববিদেরা অনুপাত, প্রতিসাম্যতা,ঐকতান, ক্রম, জটিলতা এবং ভারসাম্য নিয়ে অনেক গভীরে গবেষণা করেছেন।
সম্প্রতি জার্মান মনস্তত্ত্ববিদ গোস্তাভ ফেকনার পরীক্ষামূলক ভাবে বলেন যে লোকজন গোল্ডেন অনুপাতে(১.৬ঃ১) থাকা বাহুবিশিষ্ট চতুর্ভুজ পছন্দ করে। অর্থাৎ সুন্দরের ক্ষেত্রে বস্তুর গাঠনিক প্যাটার্ন এর একটা ভূমিকা আছে। কিন্তু তারপরেও গোস্তাভ বিশ্বাস করতে শুরু করেন সুন্দর বিষয়টা অনেক ক্ষেত্রেই মানব মস্তিষ্কে থাকে।
ফ্র্যান্জ শুবার্ট এর গান,ভ্যালাজক্যাজ এর চিত্রকলা কিংবা কোন সুন্দরী রমনী এসবই আমাদের কাছে অত্যন্ত সুন্দর। কোন কিছুকে সুন্দর হিসেবে প্রতীয়মান করার জন্যে আমাদের মস্তিষ্কে কি কোনো বিউটি সেন্টার বা সুন্দরের প্রতি সাড়া কেন্দ্র আছে? এই প্রশ্নের জবাব মনোবিদ এবং স্নায়ু বিজ্ঞানীরা খুঁজে চলেছে অনেক আগে থেকেই।
সম্প্রতি ১০০০ লোকজনের উপর করা একটা মেটা এনালাইসিস জানান দিচ্ছে যে আমাদের মস্তিষ্কে একটা নয় দুইটা বিউটি সেন্টার রয়েছে। চীনের সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হু চুয়ান পেং গবেষণা দলটির নেতৃত্বে ছিলেন। গবেষণাপত্রটি কগনিটিভ,এফেক্টিভ এন্ড নিউরোসায়ন্স জার্নালে প্রকাশিত হয়। দলটি যুবক, মধ্যবয়সী (১৮-৫০) কতজন লোকের মস্তিষ্কের উপর করা ৪৯ টি স্টাডি নিয়ে গবেষণা করেন। অংশগ্রহনকারীদের মধ্যে কেউই কোনো শিল্পী ছিলেন না। কিছু স্টাডি মানুষের মুখাবয়বের প্রতি মস্তিষ্কের সাড়া নিয়ে কাজ করে যেখানে অন্যান্য গুলো কোনো নান্দনিক শিল্প, চিত্রকলা, ভিজ্যুয়াল, টেক্সচার, নাচের দৃশ্য এবং স্থাপত্য স্থানের প্রতি সাড়া নিয়ে কাজ করেছে। প্রতিক্ষেত্রেই এফএমআরআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে অংশগ্রহনকারীর সাড়া দানের সময় তার মস্তিষ্কের ছবি তোলা হয়েছে। গবেষকরা এক্টিভেশন লাইকলাইহুড এস্টিমেশান কৌশল অবলম্বন করে জানার চেষ্টা করেন যেসব অংশগ্রহনকারী কোনো কিছুকে সুন্দর হিসেবে সাড়া প্রদান করে তাদের মস্তিষ্কের প্যাটার্নে তখন কোনো মিল আছে কিনা।
গবেষণাটি জানায় যে সুন্দর মুখাবয়ব এর প্রতি সাড়া দানে মস্তিষ্কের ভেন্ট্রমেডিয়াল প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স (ভিএমপিএফসি),সম্মুখ সিঙ্গুয়ালেট কর্টেক্স এবং ভেন্ট্রাল স্ট্র্যাটাম অংশ সক্রিয় হয়। যেখানে কুৎসিত মুখাবয়বের ক্ষেত্রে এমনটা হয় না। তবে নান্দনিক কোনো শিল্পের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের সম্মুখ মেডিয়াল প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স সক্রিয় (এএমপিএফসি) হয়।
এই ভিন্ন ধারার সাড়া প্রদানের ব্যাখ্যা কি হতে পারে? ভেন্ট্রাল স্ট্র্যাটাম আমাদের মস্তিষ্কের রিঅ্যাওয়ার্ড প্রক্রিয়ার একটা গুরুত্বপূরর্ণ অংশ। আমরা কোনো কিছুতে আনন্দ পাই এর পেছনে দায়ী এই রিঅ্যাওয়ার্ড প্রক্রিয়া। সুতরাং বলা যায় সুন্দর মুখাবয়বের প্রতি সাড়াদান মস্তিষ্কের “প্রাথমিক রিঅ্যাওয়ার্ড” প্রক্রিয়ার অন্তর্ভূক্ত যেমনটা খাদ্য কিংবা যৌনতার প্রতি সাড়া দানের মতো যা কিনা জিনগত ভাবে পাওয়া। নান্দনিক কোনো শিল্পের প্রতি সাড়াদান “সেকেন্ডারী রিঅ্যাওয়ার্ড” প্রক্রিয়ার অন্তর্ভূক্ত। টাকা উপার্জন করতে পারার আনন্দটাও এই প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়ে। পরবর্তীতে জানা যায় এএমপিএফসি অংশটি সেকেন্ডারী রিঅ্যাওয়ার্ড প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত।
নতুন এই গবেষণাটি আসলেই কি প্রমাণ করে? এটি আসলে সুন্দর কে নিয়ে চলতে থাকা মানুষের মধ্যে বিতর্কের সমাধানে অবদান রাখে। কোনো কিছুকে সুন্দর দেখা কিংবা কুৎসিত দেখা বিষয়ে প্রত্যেক মানুষের মস্তিষ্কে চলতে থাকা প্রক্রিয়া গুলোর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করে গবেষণাটি। ভবিষ্যতে হয়ত জানা যাবে আমাদের মস্তিষ্কে আরো অনেক গুলো বিউটি সেন্টার রয়েছে। গবেষণাটি এটাই বলে যে আমরা সৌন্দর্যের স্বাদ সকল বস্তুর মধ্যেই খুঁজে পাই না। কিন্তু দুইটা ভিন্ন প্রক্রিয়ায় আমরা তা অনুভব করি।
এসডব্লিউএসএস/১৪৩০
আপনার মতামত জানানঃ