উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে। কারণ যুক্তরাজ্যের একটি আদালত তাকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তরের আদেশ দিয়েছেন। বুধবার (২০ এপ্রিল) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আদালতের আদেশের পর এখন বিষয়টি চলে গেল যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেলের হাতে। প্রত্যর্পণের বিষয়গুলো এখন তিনি চূড়ান্ত করবেন।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ আটকাতে অ্যাসাঞ্জ যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু গত মাসে সুপ্রিম কোর্ট অ্যাসাঞ্জের ওই আবেদন বাতিল করে দেয়। তারপরই ওয়েস্টমিনস্টার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সংক্ষিপ্ত শুনানি শেষে এই আদেশ এলো।
আদালতের প্রধান ম্যাজিস্ট্রেট পল গোল্ডস্প্রিং অ্যাসাঞ্জকে প্রত্যর্পণের আদেশ দেন।
শুনানিতে বেলমার্শ কারাগার থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন আ্যাসাঞ্জ। আদালতে শুনানি চলাকালে বাইরে অ্যাসাঞ্জের সমর্থকরাও জড়ো হয়েছিলেন। অ্যাসাঞ্জের স্ত্রী মরিসও আদালতের পাবলিক গ্যালারিতে ছিলেন।
অ্যাসাঞ্জ আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ পাবেন। আর যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেয়া হলে গোপনীয় সামরিক ও কূটনৈতিক নথি ফাঁসের জন্য তার বিচার করা হবে।
অ্যাসাঞ্জের আইনজীবী মার্ক সামার্স আদালতের প্রধান ম্যাজিস্ট্রেটকে বলেছেন, ‘মামলাটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে পাঠানো ছাড়া তার হাতে আর কোনো বিকল্প ছিল না। এই মুহূর্তে অ্যাসাঞ্জের দলের পক্ষে নতুন প্রমাণ উপস্থাপনের দ্বার খোলা ছিল না। কিন্তু সেখানে নতুন কিছু অগ্রগতি হয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের সাজা এবং তাদের শর্তাবলী সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ‘গুরুত্বপূর্ণ নথি দেয়া’হবে বলেও জানান তিনি।
গত মাসে সুপ্রিম কোর্ট যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে অ্যাসাঞ্জের আপিল খারিজ করে দেওয়ার এই সংক্ষিপ্ত শুনানি অনুষ্ঠিত হলো। সাত মিনিটের শুনানি শেষে প্রত্যর্পণের আদেশ জারি করেন চিফ ম্যাজিস্ট্রেট পল গোল্ডস্প্রিং।
ভিডিও লিঙ্কে বেলমার্শ কারাগার যুক্ত হওয়া অ্যাসাঞ্জের পরণে ছিল একটি জ্যাকেট ও টাই। গত মাসে স্টেলা মরিসকে কারাগারেই বিয়ে করেন তিনি। শুনানিতে শুধু নিজের নাম ও জন্মতারিখ নিশ্চিত করতে কথা বলেন তিনি।
শুনানির সময় ওয়েস্টমিনিস্টার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পাবলিক গ্যালারিতে অনেক মানুষ জড়ো হয়েছিলেন অ্যাসাঞ্জের সমর্থনে। এদের মধ্যে ছিলেন স্টেলা মরিস ও লেবার পার্টির সাবেক নেতা জেরেমি করবিন।
৫০ বছর বয়সী অ্যাসাঞ্জ ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে লন্ডনের উচ্চ নিরাপত্তা থাকা বেলমার্শ কারাগারে বন্দি আছেন।
সুইডেন সরকারের কাছে হস্তান্তর এড়াতে ২০১২ সালে পালিয়ে লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয় নেন অ্যাসাঞ্জ। ২০১৯ সালে ইকুয়েডরের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হলে দূতাবাস ছাড়তে হয় অ্যাসাঞ্জকে। পরে দূতাবাসের বাইরে অপেক্ষারত লন্ডনের পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। সেই সময় থেকেই বেলমার্শ কারাগারে আছেন অ্যাসাঞ্জ।
একটি মামলায় জামিনের শর্ত লঙ্ঘন ও আদালতে হাজিরা না দেয়ায় গ্রেপ্তার হন তিনি।
উইকিলিকস প্রতিষ্ঠা ও ওয়েবসাইটে যুক্তরাষ্ট্রসহ দেশ-বিদেশের লাখো গোপন ও স্পর্শকাতর সামরিক ও কূটনৈতিক তথ্য ফাঁস করে বিভিন্ন সরকারকে ক্ষেপিয়ে তোলেন অস্ট্রেলীয় সম্পাদক, প্রকাশক ও তথ্য অধিকারকর্মী অ্যাসাঞ্জ।
তার বিরুদ্ধে ১৭টি গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগসহ ১৮টি অভিযোগ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। সব অভিযোগ প্রমাণে ১৭৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে তার।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২৩১২
আপনার মতামত জানানঃ