ইউরোপের দেশ সুইডেনে ইতিহাস গড়েছিলেন ম্যাগডালেনা অ্যান্ডারসন। স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার সুইডেনের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা ও অর্থমন্ত্রী ম্যাগডালেনা। তবে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ১২ ঘণ্টা না পেরোতেই পদত্যাগ করেছেন তিনি।
পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রী ম্যাগডালেনা অ্যান্ডারসন পার্লামেন্টের স্পিকারের কাছে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি শিগগিরই একক দলের সরকারের প্রধান হিসেবে ফিরে আসবেন। অন্য দলের পক্ষ থেকে জোরালো সমর্থন পাবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
যে কারণে পদত্যাগ
মূলত তার সরকারের ওপর থেকে জোট সঙ্গী গ্রিন পার্টির সমর্থন প্রত্যাহার ও পার্লামেন্টে বাজেট অনুমোদন করাতে ব্যর্থ হওয়ায় নাটকীয়ভাবে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়েন ম্যাগডালেনা। খবর আল জাজিরা ও বিবিসির।
সুইডেনের ইতিহাসের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই পদত্যাগ করেছেন। ম্যাগডালেনা অ্যান্ডারসনকে গতকাল বুধবার সুইডেনের ক্ষমতাসীন জোটের নেতা ও দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
কিন্তু তার জোটের শরিক দল সরকার থেকে সরে দাঁড়ালে এবং মিজ অ্যান্ডারসনের বাজেট প্রস্তাব পাস না হওয়ায় পদত্যাগ করেন তিনি।
সংসদে বিরোধী দলের উত্থাপিত বাজেট প্রস্তাব পাস হয়। উল্লেখ্য, বিরোধী জোটে অভিবাসন বিরোধী কট্টর ডানপন্থী দল রয়েছে। এরপর ম্যাগডালেনা অ্যান্ডারসনের নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক, গ্রিনস পার্টি মন্তব্য করেছে যে তারা ‘প্রথমবারের মত কট্টর ডানপন্থীদের উত্থাপিত বাজেট’ মেনে নিতে পারছে না।
এরপরই মিজ অ্যান্ডারসন স্পিকারকে জানান যে তিনি পদত্যাগ করতে চান। তবে একক দলের নেতা হিসেবে আবারও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট দলের এই নেতা বলেন, “কোনো একটি দল জোট ছেড়ে বের হয়ে গেলে জোট সরকারের ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার সাংবিধানিক একটি চর্চা রয়েছে। আমি এমন একটি সরকারের নেতৃত্ব দিতে চাই না যার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।”
সংসদের স্পিকার জানিয়েছেন দলের পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানতে তিনি দলের নেতাদের সাথে যোগাযোগ করবেন।
যেভাবে নির্বাচিত হন
গত ১০ নভেম্বর সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী স্টেফান লোফভেন পদত্যাগ করেন। ২০১৪ সাল থেকে গ্রিন পার্টিকে সঙ্গে নিয়ে সংখ্যালঘু জোটের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন তিনি। চলতি বছরের শুরুর দিকে স্টেফান বলেছিলেন, দলের পরবর্তী নেতৃত্বকে যথেষ্ট সময় দিতে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের সাধারণ নির্বাচনের আগে পদত্যাগ করবেন তিনি।
স্টেফানের পদত্যাগের পর ক্ষমতাসীন সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের নেতা নির্বাচিত হন ৫৪ বছর বয়সী ম্যাগডালেনা অ্যান্ডারসন। ম্যাগডালেনাকে বুধবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচন করা হয়।
সূত্র মতে, সুইডিশ আইন অনুযায়ী সিংহভাগ সাংসদ তার বিরুদ্ধে ভোট না দিলেই তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা পান। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর ৫৪ বছর বয়সী সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নেতাকে সংসদের একাংশ দাঁড়িয়ে সম্মান জানায়।
ম্যাগডালেনা অ্যান্ডারসনের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি শেষ মুহূর্তে বাম দলের সাথে জোট তৈরি করে। তার দল দ্য গ্রিনস পার্টির সাথেও জোট অক্ষুণ্ণ রাখে। সংসদের ৩৪৯ সদস্যের মধ্যে ১৭৪ জন মিজ অ্যান্ডারসনের বিপক্ষে ভোট দেয়। আর তার পক্ষে ভোট দেয় ১১৭ জন সাংসদ। তবে আরো ৫৭ জন ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকলে এক ভোটে বিজয়ী হন তিনি।
উপসালা শহরের সাবেক জুনিয়র সাঁতার চ্যাম্পিয়ন ম্যাগডালেনা অ্যান্ডারসন তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করেন ১৯৯৬ সালে, তখনকার প্রধানমন্ত্রী গোরান পেরসনের উপদেষ্টা হিসেবে। মিজ অ্যান্ডারসন গত সাত বছর সুইডেনের অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
বুধবার সু্ইডেনের সংসদ সদস্যরা ম্যাগডালেনা অ্যান্ডারসনকে সমর্থন দেয়ার আগ পর্যন্ত সুইডেনই ছিল একমাত্র নর্ডিক দেশ যাদের কোনো নারী প্রধানমন্ত্রী ছিল না।
তবে গতকাল বুধবার সকালে সুইডেনের ইতিহাসের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হলেও একই দিন সূর্য ডোবার আগেই তিনি তার পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
এসডব্লিউ/এসএস/১৬৩৫
আপনার মতামত জানানঃ