আমদানিতে কঠোরতা আরোপ করা সত্ত্বেও ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক লেনদেনের ঘাটতির সম্মুখীন হয়েছে বাংলাদেশ। ২০২২ অর্থবছরে সেই ঘাটটির পরিমাণ ছিল ৬ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন যা বাংলাদেশ ব্যাংকের (বিবি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
গত বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের ব্যালেন্স অফ পেমেন্ট থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বিগত অর্থবছরে (জুলাই-জুন) বাংলাদেশ ৬৯ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। এই সময়ের মধ্যে ৫২ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন মূল্যের পণ্য রফতানি হয়েছে।
এ কারণে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ১৭ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার। অর্থবছর ২০২৩-এ, আমদানি কমেছে ১৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ, যেখানে রফতানি বেড়েছে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ।
বিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, রফতানির চেয়ে আমদানি বেশি হওয়ায় বিশ্ববাজারে জ্বালানিসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ছে। রেমিট্যান্স ও রফতানি আশানুরূপ হচ্ছে না, বৈদেশিক বিনিয়োগ কমছে এর প্রভাবে বাংলাদেশ বাণিজ্য ঘাটতির মধ্যে পড়ছে।
২০২৩ অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতি সামগ্রিক বাণিজ্য ভারসাম্যে একটি বড় ব্যবধান তৈরি করেছে। এই ঘাটতি ৮ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
সামগ্রিক চলতি হিসাবে ঘাটতি বৃদ্ধির অর্থ হলো বিভিন্ন উৎস থেকে দেশে আসা বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ যা পরিশোধ করা হচ্ছে তার চেয়ে বেশি। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করতে হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২৩ অর্থবছরে ১৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন বিক্রি করেছে। বিবি আগের অর্থবছরে ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন বিক্রি করেছে। এভাবে ডলার বিক্রির কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ক্রমাগত কমছে। চলতি বছরের ২৫ জুন পর্যন্ত রিজার্ভ ৩০ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
বিদেশী প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) অর্থবছর ২০২৩-এ ২ দশমিক ৮৭ শতাংশ কমে ৪ দশমিক ৫০ বিলিয়ন হয়েছে যা ২০২২ অর্থবছরে ছিল ৪ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন।
২০২৩ অর্থবছরে ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে বাংলাদেশ যা ২০২২ অর্থবছরে ছিল ২১ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলার।
বিবি কর্মকর্তারা বলেন, রফতানির চেয়ে বেশি আমদানি, রেমিট্যান্সের মন্দা এবং এফডিআই প্রবাহের কারণে বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতির মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছর শুরুই হয়েছিল লেনদেনের ভারসাম্যে ঘাটতি নিয়ে। প্রথম তিন মাসে অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২৩১ কোটি ৪০ লাখ (২.৩১ বিলিয়ন) ডলার। চার মাস শেষে (জুলাই-অক্টোবর) তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার। নভেম্বর শেষে তা আরও বেড়ে ৬ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলারে উঠেছে।
গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর বলেন, ‘আমদানি বাড়ায় আর রেমিট্যান্সের ধীরগতির কারণে বৈদেশিক লেনদেনে এই ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তবে, এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। আমদানি বাড়ার ভালো দিকও আছে। দেশে বিনিয়োগ বাড়বে; কর্মসংস্থান হবে। অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হবে।’
প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি নিয়ে শেষ হয়েছিল গত ২০২০-২১ অর্থবছর। নয় মাস পর্যন্তও (জুলাই-মার্চ) এই সূচক উদ্বৃত্ত ছিল। কিন্তু আমদানি বেড়ে যাওয়ায় এপ্রিল থেকে ঘাটতি (ঋণাত্মক) দেখা দেয়।
বেশ কয়েক বছর পর সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যেও ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। ৯২৭ কোটি ৪০ লাখ (৯.২৭ বিলিয়ন) ডলারের বড় উদ্বৃত্ত নিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছর শেষ হয়েছিল। তার আগের বছরে উদ্বৃত্ত ছিল ৩১৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার।
আমদানি বাড়ায় অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচক বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবে ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ
এসডব্লিউএসএস/১৯১০
আপনার মতামত জানানঃ