গা ছমছমে গহীন জঙ্গল। খুব সাহসী না হলে কেউ ট্রেকিংয়ের সাহসও করেন না। কিন্তু বন বিভাগের কর্মীদের মাঝে মধ্যেই প্রবেশ করতে হয় গহীনে। সম্প্রতি বন বিভাগের একটি দল সেই জঙ্গলে ট্রেকিং করতে যান। জঙ্গলের মধ্যেই হুট করে এক জন একটি গুহার পাথরে হোঁচট খেয়ে পড়ে যান! তারপরই বাড়তে থাকে রহস্য, সন্ধান মেলে গুপ্তধনের।
ভারতের গুজরাটের দেবগড় বরিয়ার বনাঞ্চলের কথাই বলা হচ্ছে। দেশটির বন ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কাছে জঙ্গলটির গুরুত্ব অপরিসীম। অতীতেও মধ্যপ্রস্তর যুগের অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে এই বনাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন এলাকায়। সেই দেবগড় বরিয়াতেই নতুন করে খোঁজ মিলল পাঁচ হাজার বছরের পুরোনো এক সভ্যতার।
জঙ্গলটি শ্লথ ভালুক বা কালো ভালুকের জন্য বিখ্যাত। শ্লথ ভালুক ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া যায়, তবে এই জঙ্গলে একটু বেশিই এদের বসবাস। এরা কালো রঙের হয়, এই জীব মূলত নিশাচর। শ্লথ ভালুক হলো একমাত্র ভালুক, যার কানে লম্বা চুল রয়েছে। শ্লথ ভালুক বুকের উপর একটি সাদা Y- বা V-আকৃতির চিহ্ন রয়েছে। এদের মাথা এবং মুখ কালো ভালুকের থেকে অনেকটাই আলাদা।
শুধু ভালুকই নয়, এই জঙ্গল এবং আশপাশের এলাকা ঐতিহাসিক সংস্কৃতি এবং সভ্যতার ভাণ্ডার। নতুন করেই সেখানে আবিষ্কৃত হয় পাঁচ হাজার বছরের পুরোনো সভ্যতার গুহাচিত্র। বিষয়টি আরো খতিয়ে দেখতে ধীরে ধীরে গুহার ভেতরে প্রবেশ করেন বনকর্মীরা। গুহার মেঝেতেও ওই ধরনের বেশ কয়েকটি ছবি তাদের চোখে পড়ে।
কিন্তু ধীরে ধীরে গুহার আরো ভেতরে ঢুকতেই ওই বনকর্মীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তারা দেখেন, ওই অমূল্য প্রত্নতাত্ত্বিক গুহাচিত্রগুলোকে পাহারা দিচ্ছে একটি শ্লথ ভালুক। গুহার ভেতরের একটি প্রকোষ্ঠে ওই ভালুক ছিল বলে বনকর্মীরা নিশ্চিত করেছেন।
ওই গুহা থেকে ফিরে আসার সময় বেশ কয়েকটি ছবি সম্বলিত পাথর সঙ্গে করে নিয়ে ফেরেন বনকর্মীরা। সেই পাথরের টুকরোগুলো পরীক্ষা করে দেখা যায়, ওই অঞ্চলে মধ্যপ্রস্তর যুগে মানুষের বসবাস ছিল। গড়ে উঠেছিল এক সভ্যতা। আর সেই সভ্যতার মানুষেরাই এই গুহাচিত্রগুলো এঁকেছিলেন।
ওখানে এক কালে বসবাসকারী মানুষেরা গুহার দেওয়ালে এবং পাথরে যে ছবিগুলো এঁকেছিলেন, তার বেশ কয়েকটি এখনও অক্ষত রয়েছে বলে প্রত্নতাত্ত্বিকরা জানিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, গুহাতে গ্রানাইট পাথরের উপর ছবিগুলো এমনভাবে আঁকা হয়েছিল, যাতে সেগুলো বৃষ্টি, বাতাস এবং প্রখর রোদেও নষ্ট না হয়।
বনকর্মীরা জানিয়েছেন, জঙ্গলের আরো বেশ কিছু পাহাড়ের গায়ে এই ধরনের ছবি রয়েছে, যেগুলো আংশিকভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। এই ছবিগুলো মূলত দেবগড় বারিয়া ও সাগতলার মাঝখানের ভ্যাভরিয়া ডুঙ্গার পাহাড়ে রয়েছে। এই গুহাচিত্রগুলোর বেশ কয়েকটিকে ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন সহকারী বন সংরক্ষক প্রশান্ত তোমর। তার কথায়, ‘কোথাও কোথাও এই চিত্রগুলো অক্ষত রয়েছে। আবার কোথাও আংশিকভাবে মুছে গেছে। গুহাটি একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অবস্থিত। সেখানে মানুষের আনাগোনা কম। তার উপরে একটি শ্লথ ভালুক এই গুহা পাহারা দেয়। আর সেই কারণেই পাহাড়ের উপরের ছবি নষ্ট হলেও গুহার ভেতরের ছবি অক্ষত রয়েছে।’’
গুজরাটের এমএস বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক এবং গুহাচিত্র বিশেষজ্ঞ, ভিএইচ সোনাওয়ানে বলেন, ‘পাহাড়ের পাথরে আঁকা চিত্রগুলো দেখে মনে হচ্ছে, সেগুলি আলাদা আলাদা সময়ের। একটি ষাঁড় এবং কয়েকটি মানবচিত্র সম্ভবত মধ্যপ্রস্তর যুগের।’
সোনাওয়ানে ১৯৭১ সালে পঞ্চমহল জেলার তরসাঙে গুজরাতের প্রথম গুহাচিত্র আবিষ্কার করেছিলেন। সেই গুহাচিত্রগুলো ১৩ বা ১৪ শতকের বলে মনে করা হয়।
এসডব্লিউ/এসএস/১৮৫৫
আপনার মতামত জানানঃ