মহাবিশ্বে আমাদের বসবাস মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে। অ্যান্ড্রোমিডা আমাদের প্রতিবেশী গ্যালাক্সি। এটি আমাদের মিল্কিওয়ের দিকে প্রচণ্ড গতিতে ছুটে আসছে। মহাকাশবিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেছেন অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির সাথে আমাদের গ্যালাক্সির সংঘর্ষ হতে যাচ্ছে। তো এ রকম দুটি গ্যালাক্সির সংঘর্ষে গ্যালাক্সিগুলো কি নিজেদের ধ্বংস করে ফেলে? কী হবে পৃথিবী সহ অন্যান্য সকল কিছুর ভবিষ্যৎ? নাকি বিজ্ঞানীদের কাছে আছে অন্য উত্তর?
কয়েক ডজন গ্যালাক্সি আমাদের মিল্কিওয়ের ছায়াপথের কাছাকাছি অবস্থান করছে, অ্যান্ড্রোমিডা হল আমাদের সবচেয়ে কাছের বিশাল আকারের সর্পিলাকার বা স্পাইরাল গ্যালাক্সি। অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির ব্যাসার্ধ ১১০,০০০ আলোকবর্ষ। অর্থাৎ এর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যেতে আলোর মোটামুটি ২২০,০০০ বছর লেগে যাবে। উত্তর গোলার্ধে রাতের আকাশে অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি খালি চোখে দেখা যায়, যথেষ্ট উজ্জ্বল।
আমাদের মিল্কিওয়ে ছায়াপথের ব্যাসার্ধ ৫২,৮৫০ আলোকবর্ষ যা অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির ব্যাসার্ধের অর্ধেক। গ্রিক মিথোলজির ইথিওপিয়ার রানীর নাম অনুসারে অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সিটির নামকরণ করা হয়।
১৯২০ সাল, এডউইন হাবল ও তার দল দেখলেন অধিকাংশ গ্যালাক্সি আমাদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। কিন্তু অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি বা মেসিয়ার ৩১ (M31)-এর ক্ষেত্রে এরকম দেখা গেল না। মহাকাশবিজ্ঞানীরা দেখলেন গ্যালাক্সিটি প্রতি ঘণ্টায় ২৫০০০০ মাইল বেগে আমাদের গ্যালাক্সির দিকে ধেয়ে আসছে। এই গতিতে আপনি এক ঘণ্টার মধ্যেই পৃথিবী থেকে চাঁদে পৌঁছে যেতে পারবেন।
কিন্তু তৎকালীন এই আবিষ্কার, অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সিটি আমাদের দিকে আসবে না এর দিক পরিবর্তন করবে সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এরপর হাবল স্পেস টেলিস্কোপের সাহায্যে বিভিন্ন শ্রমসাধ্য পরিমাপের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা এই গ্যালাক্সির গতি ও অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন। প্রায় একশো বছর পর দুজন মহাকাশ বিজ্ঞানী রোল্যান্ড ভ্যান ডার মারেল এবং স্যাংমো টনি শন বাল্টিমোরে অবস্থিত Space Telescope Science Institute থেকে নিশ্চিত করেন যে অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি বর্তমানে আমাদের থেকে ২.৫ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থান করছে।
অ্যান্ড্রোমিডা যে দূরত্বে অবস্থান করছে এবং যে গতিবেগ নিয়ে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে তাতে ৪ বিলিয়ন বছরের মধ্যেই এই সংঘর্ষটি হতে চলেছে। কিন্তু সংঘর্ষকালীন সময় আমরা যদি উপস্থিত থাকি আমরা কি বেঁচে থাকব? কিংবা আমাদের মিল্কিওয়ে ছায়াপথ কি বিশাল এক সংঘর্ষের মাধ্যমে ধ্বংস হয়ে যাবে?
মজার বাপার হল সংঘর্ষ চলাকালীন সময়ে আমরা বেঁচে থাকবো (যদি ততদিনে অন্য কোনো উপায়ে আমাদের অস্তিত্ব ধ্বংস হয়ে না থাকে)। অবিশ্বাস্য হলেও আমাদের মিল্কিওয়ে ছায়াপথও ধ্বংস হয়ে যাবে না!
নাসা নিশ্চিত করে যে এই সংঘর্ষটি আমাদের গ্যালাক্সি, সূর্য এবং আমাদের সোলার সিস্টেমের ওপর প্রভাব ফেলবে। সূর্য তার অবস্থান পরিবর্তন করবে, অর্থাৎ সূর্য আমাদের গ্যালাক্সির যে কক্ষপথে ঘুরছে তা থেকে দূরে সরে যাবে। তবে আমাদের সোলার সিস্টেম ও পৃথিবীতে মারাত্মক কোনো প্রভাব আসবে না। অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির গতি প্রকৃতি এবং অবস্থান নির্ণয়ে হাবল টেলিস্কোপ অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছে। হাবল টেলিস্কোপের বদৌলতেই আজকে বিজ্ঞানীদের কাছে উত্তরটা স্পষ্ট।
মূলত গ্যালাক্সির আকার এতই বিশাল যে এর মধ্যে থাকা বস্তুকণা, গ্যাস, গ্রহ, গ্রহাণু ও নক্ষত্রগুলো যথেষ্ট দূরে দূরে অবস্থান করে। ফলে দুটি গ্যালাক্সির সংঘর্ষ হলে সাধারণত এর মধ্যবর্তী নক্ষত্রগুলো পরস্পরের সাথে ধাক্কা খেয়ে ধ্বংস হয়ে যায় না।
সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয় ঘটবে যখন আমারা অ্যান্ড্রোমিডা ও মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির একে অপরের সাথে মিশে যাওয়া পৃথিবী থেকে লক্ষ্য করবো। আমাদের পৃথিবীতে ততদিনে কোনো মানবসভ্যতা টিকে থাকবে কিনা সন্দেহ। কারণ তখন সূর্যের হাইড্রোজেন জ্বালানি শেষ হয়ে যাবে এবং আকারে বৃদ্ধি পেতে থাকবে। সূর্যের আকার এতটাই বেড়ে যাবে যে এটি প্রসারিত হতে হতে শুক্র গ্রহের কক্ষপথে এসে যাবে এবং বুধ ও শুক্রকে গ্রাস করে নেবে। পৃথিবীতে তাপমাত্রা থাকবে তখন প্রচণ্ড বেশি।
এসডব্লিউএসএস/১১৩৫
আপনার মতামত জানানঃ