বিশ্বজুড়ে কমছে পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা। অনেকেই এর জন্য দায়ী করছেন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাড়তে থাকা তাপমাত্রাকে। পুরুষের স্বাভাবিক প্রজনন ক্ষমতার ওপর চারপাশের পরিবেশের প্রভাব নিয়ে আলোচনা দীর্ঘকাল ধরে চলে আসছে। খ্যাতনামা ব্রিটিশ শেফ গর্ডন র্যামসে এই সমস্যা নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন বহু আগে। প্রকৃত প্রস্তাবেই গুরুতর আকার ধারণ করেছে এই সমস্যাটা। কিন্তু কতটা গুরুতর, তা কি আমরা জানি?
যেকারণে প্রজনন ক্ষমতা হারাচ্ছে পুরুষ
গবেষকরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীজুড়ে বাড়ছে তাপমাত্রা। ফলে, একদিকে বাড়ন্ত গরম, আরেক দিকে ল্যাপটপ-মোবাইল-সাওনা’র অত্যধিক ব্যবহারের ফলে কমছে পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা। হয়ত একদিন এভাবেই লুপ্ত হয়ে যেতে পারে গোটা মানব প্রজাতি।
দীর্ঘক্ষণ কোলে ল্যাপটপ রাখলে, সাওনাতে বেশি সময় কাটালে বা গরম হতে থাকা মোবাইল ফোন পকেটে বেশিক্ষণ রাখলে কমতে পারে পুরুষের শুক্রাণু উৎপাদন ক্ষমতা। এমন তথ্যও উঠে এসেছে এক গবেষণায়।
লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিশেষজ্ঞ অ্যালান বারেকা এক গবেষণায় বলেছেন, গ্রীষ্মকালে যৌনক্রিয়া বৃদ্ধির পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ‘টেম্পারেচার শক’ বা আকস্মিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি জন্মের হার কমিয়ে দিচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গত ৮০ বছরের তথ্যের উপর ভিত্তিতে করা এই গবেষণায় দেখা যায়, শীতকালের পর ৯ মাস পেরিয়ে গেলে আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে শিশু জন্মের হার অনেক বেশি থাকে।
সেই তুলনায় গ্রীষ্মকালীন মাসে গর্ভধারণের হার বেশ কম। গবেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রার তীব্রতা এই হারকে আরো বাড়তে সাহায্য করবে। কিন্তু এই সমস্যা শুধু মানুষের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়।
যুক্তরাজ্যের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বলছে, প্রজনন ক্ষমতা কমার এই প্রবণতা কিছু বিশেষ পোকা-মাকড়ের মধ্যেও বর্তমান।
ফলে স্বাভাবিকভাবেই গবেষকেরা প্রশ্ন তুলছেন, এভাবেই কী আস্তে আস্তে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে একের পর এক প্রজাতির প্রাণী?
এছাড়া পুরুষ নিজেকে সুঠাম, পেশিবহুল বানাতে গিয়ে নিজের পৌরুষ হারাচ্ছে। হারাচ্ছে সন্তান জন্মদানের ক্ষমতাও। সুপুরুষ হিসেবে নিজেকে দেখাতে গিয়ে, নিজেকে আবেদনময়ী করতে গিয়ে নিজের পুরুষত্বকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলছেন।
এমনটি অবশ্য সবার ক্ষেত্রে নয়, অনেকের ক্ষেত্রেই এমনটি দেখা যাচ্ছে। এ বিষয় নিয়ে গবেষণা করে দুই বিজ্ঞানী এমন কথা বলেছেন। তারা হলেন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জেমস মোসাম ও প্রফেসর প্যাসি।
গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা বলছেন, নিজেকে যৌন আবেদনময় হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছেন কিছু পুরুষ। এর ফলে তিনি নিজে অবলম্বন করেন কিছু কৃত্রিম পদ্ধতি। তার মধ্যে রয়েছে স্টেরয়েড ব্যবহার। মাথার টাক ঢাকার কৃত্রিম পদ্ধতি অবলম্বনও ক্ষতিকর।
এ দুটি উপায়েই একজন পুরুষের সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা লোপ করে। ফলে এমন অনেক পুরুষ সন্তানের বাবা হতে পারছেন না। ক্লিনিকে ভিড় করা এমন পুরুষের অনেকের ক্ষেত্রে বিষয়টির প্রমাণ পেয়েছেন ওই দুই বিজ্ঞানী।
অবলুপ্তি বনাম প্রজনন ক্ষমতা
যুক্তরাজ্যের পরিবেশবিদ ম্যাথিউ গেজ বলেন, জনসংখ্যার সংরক্ষণের ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই জলবায়ু পরিবর্তনের এই প্রভাবের বিশেষ ভূমিকা থাকবে।
কিন্তু কিছু প্রজাতির প্রাণী লুপ্ত হওয়া থেকে নিস্তার পেলেও কমতে থাকা প্রজনন ক্ষমতার সমস্যা পুরোপুরি সমাধান হবে না। এটাও ভাববার বিষয়।
২০১৭ সালের একটি গবেষণা বলছে, ১৯৭৩ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশের কাছাকাছি।
লো স্পার্ম কাউন্ট বা অক্ষম শুক্রাণুর সমস্যার কারণ হিসাবে সেখানেও দেখানো হয়েছে, পারিপার্শ্বিক প্রাকৃতিক পরিবর্তন ও জীবন যাপনের ধারাকে।
এই সমস্যার মোকাবিলা করতেই গেজ ও তার সহকারীরা এখন নতুন রাস্তা খুঁজছেন। বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীদের ডিএনএ পর্যবেক্ষণ করে কিছু গঠনমূলক ফলাফল তারা বের করতে চান।
যদি তাদের গবেষণা থেকে জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রজনন ক্ষমতার হ্রাস হওয়া বিষয়ে নতুন কোনো তথ্য উন্মোচিত হয়, তাহলে হয়ত আরো জোরদার হবে জলবায়ু পরিবর্তন রোধের লড়াই।
আপাতত এই আশাতেই কাজে ব্যস্ত যুক্তরাজ্যের ইস্ট অ্যাংলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গেজ ও তার গবেষকের দল।
এসডব্লিউ/এসএস/১৪১৫
আপনার মতামত জানানঃ