ঢাকাই সিনেমার চিত্রনায়িকা পরীমনির বাসায় ‘সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগের’ ভিত্তিতে অভিযান চালাচ্ছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। তাকে গ্রেফতার করা হতে পারে এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও গ্রেফতারের বিষয়ে এখনও কোনো সুনির্দিষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি র্যাবের পক্ষ থেকে।
এর আগে লাইভে এসে পরীমনি অভিযোগ করেন যে অভিযাম চালাচ্ছে যারা, তারা পুলিশ নয়; তারা ভাঙচুর চালাচ্ছে। লাইভে তিনি বারবার সাহায্য চেয়ে আবেদন করেন।
সূত্র মতে, আজ বুধবার (৪ আগস্ট) বিকেলের দিকে পরিমণির বনানীর লেক ভিউ ১৯/এ নম্বর রোডের ১২ নম্বর বাড়িতে এ অভিযান শুরু হয়।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মঈন গণমাধ্যমকে বলেন, সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে চিত্রনায়িকা পরীমণির বাসায় র্যাব অভিযান পরিচালনা করছে। অভিযান শেষে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানানো হবে।
সাহায্য চেয়ে পরীমণির লাইভ চলাকালেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তার বাসায় প্রবেশ করেন। এ সময় তারা পরীমণির সঙ্গে আলাপ করতে চান এবং তার কাছ থেকে সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন। এক পর্যায়ে তারা পরীমণির ফেসবুক লাইভ বন্ধ করতে বলেন। পরে লাইভটি ৩২ মিনিটের সময় বন্ধ হয়ে যায়।
সূত্র মতে, অভিযান শুরুর ৩০ মিনিট পর তার বাসায় একে একে তিন থেকে চারজন র্যাবের নারী সদস্য প্রবেশ করেন। এদিকে, অভিযান চলাকালে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে পরীমণি তার বাসার বারান্দায় এসে নিচে দায়িত্ব পালনরত সাংবাদিকদের উপরে ওঠার জন্য ডাকতে থাকেন। এ সময় তিনি ভবনের পাঁচতলার বারান্দায় এসে সাংবাদিকদের বলেন, ভাই আপনারা উপরে কেন আসছেন না, আপনারা উপরে আসেন।
বনানী ১২ নাম্বার রোডে অবস্থিত পরীমণির বাসার নিচে র্যাব-১ এর একটি গাড়িসহ পুলিশের বেশ কয়েকটি গাড়িও রয়েছে। পরীমণির বাসার আশপাশে পুলিশ সদস্যরা অবস্থান নেন। মূল গেটের সামনে কয়েকজন র্যাব সদস্যকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ছিলেন র্যাবের কয়েকজন নারী সদস্যও।
জানা গেছে, পরীমণির বাসার মূল ফটক বন্ধ করে র্যাব সদস্যরা অভিযান পরিচালনা করছেন। তবে ঘটনাস্থলে র্যাবের কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন না। পরীমণির বাসার সামনে দায়িত্বরত এক র্যাব কর্মকর্তা জানান, অভিযানটি মূলত পরিচালনা করছে র্যাব সদর দফতর, সহযোগিতায় রয়েছেন র্যাব-১ এর সদস্যরা।
এর আগে ফেসবুক লাইভে এসে পরীমণি অভিযোগ করেন, তার বাসায় বিভিন্ন পোশাকে লোকজন এসে ফ্ল্যাটের দরজা খুলতে বলছেন। সে সময় তিনি বলেন, পুলিশ পরিচয়ে কে বা কারা অভিযান চালাচ্ছে। যারা এসেছে তারা পুলিশ নাম নিয়ে ভাঙচুর চালাচ্ছে। কেউ লাল পোশাকে, কেউ সাদা পোশাকে আসছে।
তিনি অভিযোগ করেন, তারা দরজার সামনে এসে আমাকে বলছে আমারা পুলিশ দরজা খুলেন। আমাকে হুমকি দিচ্ছে। তবে আমি দরজা খুলব না। কোন পুলিশ এভাবে অভিযান চালায় না। বাসায় আমার বয়স্ক নানা আছেন।
লাইভে পরীমনি আরও বলেন, পুলিশ হলে তো দরজা খুলেই দেব। কিন্তু তারা তো পরিচয় দিচ্ছে না। মেরে ফেললে সবার সামনে মেরে ফেলে যাক। আমি লাইভ কাটব না। সবাই দেখুক। সবাইকে দেখায় দেব, এরা কী কী করে।
তিনি আরও বলেন, আমি খুব ভয় পাচ্ছি। সাংবাদিক বা পুলিশ আপনারা কেউ আসেন। অনেক সময় ধরেই আপনার লাইভটি দেখছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত কেউ না আসবেন আমি লাইভটি চালাবো।
পরীমণি বলেন, ডিসি হারুন ভাইকে (তেজগাঁও বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি) হারুন-অর-রশিদ) ফোন দিয়েছি উনি জানিয়েছেন আমাদের কেউ যায়নি।
এর আগে গত ১৩ জুন পরীমনির একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস ঘিরে তোলপাড় হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। পরে ওইদিন রাতে বনানীর নিজ বাসায় ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেন পরীমনি। সে রাতে সংবাদ সম্মেলনে অভিযুক্তদের নাম প্রকাশ করেন এই চিত্রনায়িকা। জানান, ৮ জুন ঢাকা বোট ক্লাবে তাকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা চালান ব্যবসায়ী নাসির ইউ মাহমুদ।
পরদিন সকালে এ ঘটনায় করা মামলায় ব্যবসায়ী নাসির ইউ মাহমুদ (৬৫), তুহিন সিদ্দিকী অমি (৩৩), লিপি আক্তার (১৮), সুমি আক্তার (১৯) ও নাজমা আমিন স্নিগ্ধাকে (২৪) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। উদ্ধার করা হয় এক হাজার পিস ইয়াবা, বিদেশি মদ ও বিয়ার।
ডিবির গুলশান জোনের উপপরিদর্শক মানিক কুমার সিকদার বাদী হয়ে বিমানবন্দর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন নাসির-অমিদের বিরুদ্ধে। ওই মামলায় সাত দিনের রিমান্ড শেষে বুধবার (২৩ জুন) আদালতে তোলা হয় নাসির-অমিকে।
পরীমনি এজাহারে উল্লেখ করেন, মদ পান করতে না চাইলে নাসিরউদ্দিন (১ নম্বর আসামি) জোর করে আমার মুখের মধ্যে মদের বোতল প্রবেশ করিয়ে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করে। এতে আমার সামনের দাঁত ও ঠোঁটে আঘাত পাই। সে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে স্পর্শ করে এবং আমাকে জোর করে ধর্ষণের চেষ্টা করে।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৭২৩
আপনার মতামত জানানঃ