ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে আপত্তিকর পোস্ট দেয়ার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় দুই ভাইকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার ( ২৬ এপ্রিল) আদালতে মাধ্যমে চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে তাদের। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন। গ্রেফতার দুই ভাই চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলা সোনাকানিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মঞ্জিলের দরগারচর এলাকার টেন্ডলপাড়ার মো. তৌহিদুল ইসলাম (২৭) ও হাফেজ মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন (২২)।
ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে আপত্তিকর পোস্ট দেয় চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার বাসিন্দা দুই ভাই। এর জের ধরেই সাতকানিয়া পৌরসভা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দেয় রবিবার রাতেই। এ ঘটনায় রাতে দুই ভাইকে আটক করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
এর আগে পটুয়াখালীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লকডাউন ও ভারতী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচার করার অভিযোগে মো. সাইফুল ইসলাম সবুজ (৩২) নামে এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ। শনিবার (২৪ এপ্রিল) দিনগত রাতে জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার খান টেলিকম নামের একটি দোকান থেকে তাকে আটক করা হয়। আটক মো. সাইফুল ইসলাম সবুজ মির্জাগঞ্জ ইউনিয়নের কপালভেরা গ্রামের মো. সাইদুর রহমানরে ছেলে। খান টেলিকম নামে তার একটি ফ্লেক্সিলোডের একটি দোকান রয়েছে।
মির্জাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহিবুল্লাহ্ বলেন, আটক ওই যুবক সরকার ঘোষিত লকডাউন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে কটূক্তি করে দেশ-রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি নষ্ট করার পায়তারা চালিয়েছেন। এমন অভিযোগে শনিবার রাতে তাকে আটক করা হয়। তিনি জানান, এ বিষয়ে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমিনুর রহমান বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গত দুই বছরে সাংবাদিক, রাজনীতিক, শিল্পী, অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক, গার্মেন্টসকর্মী থেকে শিক্ষক ছাত্র পর্যন্ত আসামী হয়ে জেল খেটেছেন। এ আইন নিয়ে বিতর্ক এবং উদ্বেগের মূল কারণ হিসেবে বলা হয় বেশকিছু ধারার মাধ্যমে যথেচ্ছা হয়রানির সুযোগ রয়েছে।
এ আইনের ৪৩ ধারায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি, জব্দ এবং আটকের অসীম ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। আর আইনে ব্যাক্তি বা রাষ্ট্রের ভাবমূর্তী ক্ষুণ্ন করা, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত বা উস্কানি, মানহানিকর তথ্য প্রচার ও প্রকাশ এবং আইন শৃঙ্খলার অবনতির মতো বিষয়গুলোতে বিভিন্ন ধারায় অপরাধ ও শাস্তির বিধান রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে ভুল ব্যাখ্যার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন অনেকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহনাজ হুদা বলেন, সংবিধানে নাগরিকদের স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার দিয়েছে। যেখানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অনেক ক্ষেত্রে মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে।
“সবার মধ্যে একটা ভীতি যে এইটা বললে কী হবে! এবং আমরাও বলি যে এতকিছু বলো না তোমার বিপদ হবে। এটা স্বাধীন দেশে আমরা কেন করবো? এটা কিন্তু বেশ স্বার্থকভাবে সরকার করে ফেলেছে। সেল্ফ সেন্সরশিপ একটা ভীতি প্রদর্শন, ভীতি মানুষের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া।”
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৬০৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ